শালবন বিহার
গ্রাম-শালমানপুর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, জেলা- কুমিল্লা
কুমিল্লা শহর থেকে ৯ কিমি. পশ্চিমে লালমাই ময়নামতি নামক অনুচ্চ গিরি শ্রেণীর পাদদেশে অবস্থিত। বর্গাকার এই বৌদ্ধ বিহারের প্রতি বাহুর পরিমাপ ১৬৭.৬৪ মিঃ। বিহারের ৪টি বাহুতে সর্বমোট ১১৫ টি ভিক্ষু কক্ষ ছাড়াও বিহারাঙ্গনে রয়েছে ক্রুশাকার কেন্দ্রিয় মন্দির। এটিকে শেষ নির্মাণ যুগে আয়তাকার মন্দিরে রুপান্তর করা হয়। মন্দিরের দেয়াল পোড়ামাটির ফলক চিত্র দ্বারা অলংকৃত ছিল। প্রত্মতাত্ত্বিক খননে এ প্রত্মকেন্দ্রে ৬টি নির্মাণ যুগের সন্ধান পাওয়া যায় এবং ১ম নির্মাণ যুগ ৬ষ্ঠ শতক এবং শেষ নির্মাণ যুগ ১২শ শতক বলে প্রত্মতাত্ত্বিকগন মনে করেন। বিহারের উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী স্থানে বিহারের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ১টি মাত্র প্রবেশ পথ এবং প্রবেশ পথের বাইরে উত্তর পশ্চিম পাশে আরও ১ টি ছোট আকারের মন্দির পরিলক্ষিত হয় যা বিহারের সমসাময়িক কালে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।
রুপবান মুড়া
লালমাই পাহাড়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, জেলা-কুমিল্লা
কুমিল্লা শহর হতে ৮ কিমি. পশ্চিমে লালমাই-ময়নামতি পাহাড় শ্রেণীর মধ্যবর্তী এবং কুমিল্লা কালির বাজার সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঢিবিটি সম্প্রতিকালে প্রত্মতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করে ৩৪.১৪ মি. X ২৫ মি. পরিমাপের ১ টি বৌদ্ধ বিহার ও ২৮.৯৬ মি. X২৮.৯৬ মি. পরিমাপের ক্রুশাকার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচন করা হয়েছে। মন্দিরের পূর্ব পার্শ্বস্থ প্রকৌষ্ঠ থেকে বেলে পাথরের অভয় মুদ্রায় দন্ডায়মান বৃহদাকার ১ টি বৌদ্ধ মূর্তি পাওয়া যায়। খননে প্রাপ্ত স্থাপত্য নিদর্শন ও প্রত্ম সম্পদ বিশ্লেষণে এই প্রত্মকেন্দ্রের সময়কাল পন্ডিতগণ খ্রী. ৭ম থেকে ১২শ শতাব্দী বলে অনুমান করেন।
ইটাখোলা মুড়া
লালমাই পাহাড় সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা সদর, জেলা-কুমিল্লা
রুপবান মুড়া প্রত্মকেন্দ্রের উত্তর পাশে অবস্থিত আরও ১ টি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ প্রত্মকেন্দ্র স্থানীয়ভাবে ইটাখোলা মুড়া নামে পরিচিত। এই স্থানে সম্প্রতি খনন পরিচালনা করে ৩৯.৬২ মি. X৩৯.৬২ মি. পরিমাপের ১টি বৌদ্ধ বিহার, ৬০.৬৬ মি. X২৫ মি. পরিমাপের ১টি আয়তাকার মন্দির এবং বেশ কয়েকটি স্তুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। উন্মোচিত মন্দিরটিতে মোট ৫টি নির্মাণ যুগের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়।
ভোজ রাজার বাড়ী
ময়নামতি পাহাড় সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা সদর, জেলা-কুমিল্লা
এই প্রত্মকেন্দ্রটি কুমিল্লা শহর হতে ৮ কিমি. পশ্চিমে কোটবাড়ী-টিপরা বাজার ক্যান্টনমেন্ট সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি ভোজ রাজার বাড়ী নামে পরিচিত। সম্প্রতি খননের ফলে ১টি বৌদ্ধ বিহারের আংশিক কাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছে। বিহারটি বাহ্যিক পরিমাপ ১৭৩.৪৩ মি. X১৭৩.৪৩ মি. এর দক্ষিণ বাহু সম্পুর্ণ খননের ফলে দু’প্রান্তে দুটি কক্ষ ছাড়াও ৩১ টি কক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। ফলে সিড়ি কক্ষ ছাড়া বিহারে ১২৪ টি কক্ষ আছে বলে অনুমিত হয়। বিহারের উত্তর বাহুর মধ্যভাগে মুল ফটকটির আংশিক নিদর্শন উন্মোচিত হয়েছে এবং এর কেন্দ্রস্থলে প্রদক্ষিণ পথ সহ ১টি ক্রশাকার চর্তুমুখী মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। ক্রুশাকার মন্দিরটির পরিমাপ ৪৬.৩৩ X৪৬.৩৩ মি.। এই প্রত্মস্থানে খননের ফলে কেন্দ্রীয় মন্দির হতে ১টি ব্রোঞ্জের বৃহদাকার বুদ্ধ মুর্তি, ২টি স্থানীয় নরম পাথরে তৈরী বুদ্ধ মূর্তি এবং ১টি রৌপ্য মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো পোড়ামাটির ফলক পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত খননের ফলে মোট ৪টি নির্মাণ যুগের নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়। আবিষ্কৃত স্থাপত্য কাঠামো এবং প্রত্মসম্পদের বিবেচনায় এ নিদর্শনটির সময়কাল ৮ম হতে ১২শ শতাব্দী নিরুপন করা যেতে পারে।
আনন্দ বিহার
কুমিল্লা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং লালমাই ময়নামতি পাহাড়ের পূর্ব প্রান্ত ঘেঁষে অপেক্ষাকৃত নিচু ও সমতল ভূমিতে আনন্দ বিহার প্রত্নস্থলটি অবস্থিত। ১৯৭৫ খ্রি: থেকে এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু করা হয়। আয়তনে এ বিহার শালবন বিহার থেকে অনেক বড়। বর্গাকারে নির্মিত এ বিহারের প্রত্যেক বাহুর দৈঘ্য ৬২৫ ফুট। প্রতি বাহুুতে বৌদ্ধ ভিক্ষু কক্ষ উম্মোচিত হয়েছে। বিহারের মধ্যবর্তী স্থানে ক্রুশাকার কেন্দ্রীয় মন্দির উম্মোচিত হয়েছে। খননের ফলে এখানে বৃহদাকার একটি ব্রোঞ্জের মূর্তিসহ বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্ত্ত আবিষ্কৃত হয়েছে।
কোটিলা মুড়া
কুমিল্লা সদর থেকে ৮ কিমি. এবং আনন্দ বিহার থেকে ১ কিমি. উত্তরে ময়নামতি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে এ গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলটি অবস্থিত। খননের ফলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা ৩টি স্তূপের নির্দশন উন্মোচিত হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের ত্রি-রত্ন (বৌদ্ধ,ধর্ম ও সংঘ) ৩টি স্তূপ বাংলাদেশে আর কোথায়ও পাওয়া যায়নি। প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন। ত্রি-রত্ন স্তূপের সাথে লাগোয়া পশ্চিম পাশে আরও ৯টি স্তূপ এবং পূর্ব পাশে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি ৩টি হলঘরের নির্দশন পাওয়া যায়। এগুলোর সময়কালকে খ্রিষ্টিয় সাত-তের শতক বলে অনুমান করা হয়।
চারপত্র মুড়া
কোটিলা মুড়া থেকে প্রায় ২ কিমি. উত্তর-পশ্চিমে সেনানিবাস এলাকায় একটি উঁচু সমতল পাহাড়ের চুড়ায় এই নির্দশনটি অবস্থিত। এখানে খনন করে ছোট আকৃতির মন্দিরের ধবংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে এবং তিনটি নির্মাণ যুগের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এ স্থাপত্য নিদর্শনটি নামকরণের যথার্থতা রয়েছে। খননের ফলে এখানে ৪টি তাম্রলিপি পাওয়া গিয়েছে বিধায় ঢিবিটি চারপত্র মুড়া নামে অভিহিত করা হয়েছে। স্থাপত্য শৈলী অনুযায়ী এর সময়কালকে খ্রিঃ এগার-বার শতকে ন্যস্ত করা যায়।
রাণী ময়নামতি প্রাসাদ ও মন্দির
এই প্রত্নকেন্দ্রটি লালমাই ময়নামতি পাহাড় শ্রেণীর সর্ব উত্তর প্রান্তে বিচ্ছিন্ন একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। সমতল ভূমি হতে এর উচ্চতা ১৫.২৪মি.। স্থাণীয়ভাবে এটি রাণী ময়নামতি প্রাসাদ নামে পরিচিত। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে বৌদ্ধ ধর্মীয় ক্রুশাকার মন্দির সহ ৪টি নির্মাণ যুগের স্থাপত্য নিদর্শন উন্মোচিত হয়েছে এবং এখান থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ আবিস্কৃত হয়েছে। স্থাপত্য বৈশিষ্ট ও প্রত্নসম্পদের বিশ্লেষণে এটিকে ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর প্রাচীন কীর্তি বলে অনুমিত হয়।
রাণীর কুঠি
রাণীর কুঠি কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী ধর্মসাগরের উত্তর পারে ছোটরা মৌজায় অবস্থিত। এটি তদানিন্তন মহারাজা মানিক্য কিশোর বাহাদুরের স্ত্রী বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। শতাধিক বছরের পুরাতন এই বাড়িটির নাম ‘‘রাণীর কুঠি’’ হিসেবে তদানিন্তন ত্রিপুরা রাজ্য সহ বাংলাদেশের সকল জেলায় সর্ব সাধারনের নিকট পরিচিত। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল প্রত্নসম্পদ আইন ১৯৬৮ এর ১০ ধারার (১) উপধারার ক্ষমতা বলে রাণীর কুঠিকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সতর রত্ন মন্দির
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পূর্ব দিকে জগন্নাথপুর গ্রামে এ মন্দিরটি অবস্থিত। ত্রিপুরার মহারাজা দ্বিতীয় রত্ন মানিক্য ১৭ শতকে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৮ শতকে মহারাজা কৃষ্ণ মানিক্য সমাপ্ত করেন। তিন তলা এবং ১৭টি রত্ন বিশিষ্ট এ মন্দিরটি অষ্টকোণাকার ভিত্তি ভূমির উপর স্থাপিত। এর প্রতি বাহুর পরিমাপ ৭.০১ মি.। এর ভিতর গাত্রে আস্তর করা এবং দেয়ালে চিত্র দ্বারা সজ্জিত আছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস