দেবিদ্বার সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পূর্ব দক্ষিণে এবং কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।
Rickshaws can be taken from Devidwar city.
0
ফকির- দরবেশ- আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। বার আউলিয়া চট্রগ্রামে, তিনশত ষাট আউলিয়া সিলেটে আর তিনশত আউলিয়ার বিচরণ ভূমি কুমিল্লা। এসম্পর্কে বিশিষ্ট লেখক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস লিখেছেন-
"লাকসামেতে শাহ শরীফ
কুমিল্লায় আব্দুল্লহ
ঘুমিয়ে আছে জেলার মাঝে তিনশ' আউলিয়া।"
ইসলামী গবেষক ও চিন্তাবিদদের মতে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার ইসলাম ধর্ম প্রচারে হজরত শাহ কামাল (রঃ) ও হজরত শাহ জামাল (রঃ)'র অবদান স্মরণীয়। তবে এক্ষেত্রে দেবিদ্বার ইসলাম ধর্ম প্রচারে কে সর্বপ্রথম এসেছিলেন তার কোন সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে কেউ কেউ মনে করেন ৬৭০ হিজরি ও ১২৭১ খ্রীস্টাব্দে ইয়েমেনে জন্ম গ্রহণকারী কোরেশ বংশোদ্ভুত বিশিষ্ট অলী শায়খ মাহামুদ (রঃ)'র পুত্র হজরত শাহজালাল (রঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ইয়েমেন থেকে ১২জন সফর সঙ্গী নিয়ে ভারতবর্ষের দিকে রওয়ানা হয়ে ১৩০০ খ্রীস্টাব্দে দিল্লীতে আসেন। দিল্লী থেকে ১৩১৫ খ্রীস্টাব্দে বাংলাদেশের সিলেটে (শ্রীহট্ট) আসা পর্যন্ত তার সফর সঙ্গী হন ৩৫৯ জন, এবং তিনিসহ ৩৬০জন। কারো কারো মতে ৩১৩ জন আউলিয়া ছিলেন। উনার জন্ম ৬৭০ হিজরী ও ১২৭১ খ্রীস্টাব্দে এবং ৭৬ বছর জীবদ্দশার পর অর্থাৎ ৭৪৬ হিজরী ও ১৩৪৭ খৃষ্টাব্দে তিনি সিলেটেই ইন্তেকাল করেন। সিলেট অঞ্চলে ৩২ বছর স্থায়ীভাবে বসবাস ও ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। ইসলাম ধর্ম প্রচারে তার শিষ্যদের ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করেন। হজরত শাহজালাল (রঃ)'র আগমণেরও প্রায় দু'শত বছর পূর্বে অর্থাৎ ১১১২ সালে ইয়েমেন থেকে আসা শাহ্ মোহাম্মদ আব্বাস হুসাইনী নামক একজন দরবেশ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বংশধরগণ এখনো বংশ পরষ্পরায় এখানে বসবাস করছেন।
হজরত শাহজালাল (রঃ)'র আগমন, তার সাথে আসা ৩৫৯ আউলিয়া এবং পরিবর্তিতে শিষ্যত্ব গ্রহণকারী আউলিয়াদের অবস্থান, পরিচিতি, সময়কাল ও মাজার নিয়ে ইসলামি গবেষক ও চিন্তাবিদ-দের মধ্যে বিতর্ক ও অনেক মতানৈক্য রয়েছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসা ৩৬০ আউলিয়ার পরবর্তী ধাপে আসা অনেকে বুজুর্গ আউলিয়াই হজরত শাহজালাল (রঃ)'র শিষ্যত্ব গ্রহণপূর্বক তাদের কেরামতি, সুনাম-সুখ্যাতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শায়িত আছেন।
হজরত শাহজালাল (রঃ)'র দ্বিতীয় পর্যায়ে শিষ্যত্ব গ্রহণকারী (৩৫৯ আউলিয়ার পরে) দেবিদ্বার এলাহাবাদের উটখাড়া'র শাহ্ কামাল (রঃ)'র কথা জানা যায়। দেবিদ্বারে এদের আগমন কত হিজরী বা সনে ঘটেছে তার কোন সঠিক তারিখ পাওয়া যায়নি। অনুমান করা হচ্ছে ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষ দিকে হজরত শাহজালাল (রঃ)'র শিষ্য ও প্রধান সিপাহ সালার হজরত নাছিরউদ্দিন শাহ্ (রঃ)'র সাথে শ্রীহট্টের (সিলেট'র) অত্যাচারী রাজা গৌড়গোবিন্দ রায় এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়, ওই যুদ্ধে গৌড়গোবিন্দ পরাজিত হন।
ওই সময় সম্ভবতঃ ত্রয়োদশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের প্রথম দিকে হজরত শাহজালাল (রঃ)এর শিষ্যদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তার দুই শিষ্য হজরত শাহ্ কামাল (রঃ), হজরত শাহ্ ইসরাঈল (রঃ)কে ইসলাম ধর্ম প্রচারে অন্যত্র যাওয়ার নির্দেশ দেন। কোথায় গিয়ে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করবেন, তার কোন নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ না করে দিলেও তাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল, তাদের এই বাহন উটই তাদের দ্বীন প্রচার কেন্দ্র নির্দিষ্ট করে দেবে, তাদের বহনকারী বাহন উট যেখানে গিয়ে থেমে যাবে বা উটের পা বালি কিংবা মাটিতে গেড়ে যাবে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন ও ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করবে।
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে এসে বালিতে উটের পা গেড়ে গিয়ে উট থেমে গেলে তারা এখানেই বসতি স্থাপন ও ইসলাম ধর্মপ্রচার শুরু করেন। বর্তমানে এলাহাবাদ গ্রামের ওই জায়গাটি উটখাড়া (গ্রামের পরিচয়ে) মাজার নামে পরিচিত এবং এ অঞ্চলে আল্লাহ্'র 'আবাদ' প্রচার ও প্রসার শুরু করায় উটখাড়াসহ বিশাল এলাকা আল্লহর আবাদ থেকে কালক্রমে 'এলাহাবাদ' নামে পরিচিতি লাভ করে। উটখাড়া মাজারটি কুমিল্লা জেলা সদর থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহা সড়ক হয়ে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং দেবিদ্বার সদর থেকে পূর্ব-দক্ষিণে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কারো কারো মতে হজরত শাহ্ কামাল (রঃ)'র সাথে হজরত শাহ্ জামাল (রঃ) এখানে (এলাহাবাদ গ্রামের উটখাড়া) থেকে যান এবং হজরত শাহ্ কামাল(রঃ)'র অপর দু'সফর সঙ্গী হজরত শাহ্ ইসরাইল (রঃ) ও হজরত শাহ্ মোহাম্মদ নুরুদ্দিন (রঃ) পাশ্ববর্তী বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা গ্রামে চলে যান। হজরত শাহ্ জামাল (রঃ) হজরত শাহ্ কামাল (রঃ) সম্পর্কে সহোদর বলেও জানা যায়। আর শাহ্ ইসরাঈল (রঃ) এবং শাহ্ নুরুদ্দিন (রঃ) সম্পর্কে মামা ভাগ্নে। শাহ্ ইসরাঈল (রঃ)'র ভাগ্নে ছিলেন শাহ্ নুরুদ্দিন (রঃ)। উল্লেখ্য শাহ্ ইসরাঈল(রঃ) ও শাহ্ নুরুদ্দিন (রঃ)'র মাজার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাসস্ট্যান্ড হতে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে ভারেল্লা গ্রামে অবস্থিত।
মৌলানা ছৈয়দ শাহ্ শেরআলী (রঃ)'র লিখা 'ছহি জোয়াহেরে মারফত ও শেরগঞ্জ' গ্রন্থে ত্রিপুরা(বর্তমান কুমিল্লা)'র পাইটকারা ভারেল্লা গ্রামের দু'আউলিয়া হজরত শাহ্ কামাল (রঃ) হজরত শাহ্ ইসরাঈল (রঃ); হজরত শাজালাল (রঃ)'র সাথে আসা ৩৫৯ আউলিয়ার সাথী ছিলেন না। তারা (হজরত শাহ্ কামাল (রঃ), শাহ্ ইসরাঈল (রঃ) ও হজরত শাহ্ নুরুদ্দিন (রঃ)) হজরত শাজালাল (রঃ)'র পরবর্তী দ্বিতীয় পর্যায়ে শিষ্যত্ব গ্রহনপূর্বক তারই নির্দেশে এদেশে এসে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন।
খান বাহাদুর আফজালুর রহমান স্টেট-এর আওতায় হজরত শাহ্ ঈসরাফিল (রঃ) উটখারা ওয়াকফ ষ্ট্যাট'র নামে নিজস্ব সম্পত্তি ছিল প্রায় একশত এগার একর। কালক্রমে ওই জায়গা বেদখল হয়ে বর্তমানে প্রায় তেইশ একর বার শতক জমি থাকলেও মাজারের নামে ওয়াক্ফ করা হয়েছে আরো কম। মাত্র দশ একর সাতাশি শতক। ওয়াক্ফকৃত জায়গায় মাজারের অংশ তেইশ শতক ছাড়া বাকী প্রায় দশ একর চৌষট্টি শতক সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। ওই জায়গায় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সমাজ কল্যাণ অফিস ও একটি দিঘি ও একাধিক ছোট পুকুর রয়েছে। মাজারে ৪১টি কবর আছে। তবে বংশানুক্রমে হজরত শাহ কামাল (রঃ) ও হজরত শাহ জামাল (রঃ) এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS