উপমহাদেশের বিশিষ্ট ও বিস্ময়কর সঙ্গীত প্রতিভা কুমার শচীন দেববর্মণ যিনি শচীন কর্তানামে সর্বাধিক পরিচিত। সেই শচীন কর্তার পরিত্যক্ত যে বাড়িটির অধিকাংশ জায়গা ইতোমধ্যে বেদখল হয়েছে। হাঁস মুরগীর ফার্মের নামে দখল হয়েছে অধিকাংশ জায়গা।শচীন কর্তার জরাজীর্ণ ভবনসহ পুরো বাড়ির এলাকাটি অবৈধ দখলমুক্ত করা এবং ওইস্থানে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল ইতোমধ্যে শচীন কর্তার বাসভবন পরিদর্শন করেছেন। তিনি ওই বাসভবনসহ বাড়ির এলাকা দখলমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল জেলাপ্রশাসকের সাথে ঈদোত্তর শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি পথিকৃৎ কুমিল্লার সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেববর্মনের বাড়িটি এভাবে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেয়া যায়না। কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের জন্য এ বাড়িটিকে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। জানা যায়, সাবেক জেলা প্রশাসক মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কুমিল্লা থেকে বদলি হওয়ার প্রাক্কালে শচীন দেব বর্মণের বাড়িটিকে সংরক্ষণ ও বাড়িটিকে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি অফিসিয়াল চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন। কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারও এ বিষয়টি সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিশেষ টীম ইতোমধ্যে শচীন কর্তার বাড়িটি পরিদর্শন করেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। জেলা প্রশাসক মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া হঠাৎ বদলি হয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক হিসেবে ওখানে যোগদান করায় এ কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পরপরই সাংবাদিকদের সাথে পরিচয় পর্বে সাংবাদিকগণ এ বিষয়টি তাঁর কাছে উত্থাপন করেন। তিনি এবিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এর অগ্রগতির খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, শচীন দেব বর্মণের বাড়িটি সংরক্ষণ ও বেদখলকৃত জায়গা পুনরুদ্ধারে ২টি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি জানান। প্রথমত শচীন দেববর্মণের বাড়িটি তথা বাসভবনটি সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে চিঠি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত:বেদখলকৃত জায়গা পুনরুদ্ধার করে ওখানে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি গতকাল বাড়িটির মূল জায়গা ও সরকারি খাস জমি চিহ্নিতকরণের জন্য আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিহ্নিত জায়গার চারপাশে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন এবং জরাজীর্ণ ভবনটি সংরক্ষণ ও পুন:সংস্কারের জন্য প্রত্মতত্ত্ব বিভাগকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে চিঠি দেয়ার নির্দেশ দেন। উভয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় জেলা প্রশাসকের কক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সানাউল হক ,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম মামুনুর রশিদ,অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ গোলামুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মতিন, , নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তুষারআহমেদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান সরদারসহ অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ। উল্লেখ্য, কুমার শচীন দেব বর্মণ আগরতলা রাজপরিবারের সন্তান ছিলেন। তিনি ছিলেন নবদ্বীপ বাহাদুরের উত্তর পুরুষ। আগরতলা থেকে এসে শচীন দেব বর্মণ কৃমিল্লার চর্থায় অবস্থিত নবদ্বীপ বাহাদুরের এ বাড়িতে এসে দীর্ঘদিন সঙ্গীতচর্চা করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় এসে শচীন কর্তার সাথে এ বাড়িতে দেখা করতেন। শচীন কর্তা নজরুলের অনেক গানে কন্ঠ দিয়েছেন। আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, কমলা কারিফ, হরিমতি প্রমুখ তৎকালীন প্রখ্যাত শিল্পীরাও নজরুলের গানে কন্ঠ দিয়েছেন। তাদের গানে কীর্তনের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। কিন্তু শচীন কর্তার গান কীর্তনের সুর থেকে মুক্ত। নজরুলের গানের আধুনিক রূপটি শচীন কর্তার কন্ঠেই বিশুদ্ধরূপে ফুটে ওঠতো। শচীন কর্তার স্মৃতি বিজড়িত চর্থার এ বাড়িটি সংরক্ষণ করা শুধু জেলা প্রশাসনেরই দায়িত্ব নয় বরং এ দায়িত্ব কুমিল্লার সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদেরও ইতিবাচকভূমিকা রাখা প্রয়োজন। -
সৌজন্যেঃকুমিল্লার কাগজ(পত্রিকা)
Web: http://www.comillarkagoj.com/details.php?n_id=35809#sthash.Za56iHW1.dpuf
শচীন কর্তার গান শুনতে লিংকটিতে প্রবেশ করুনঃ http://www.youtube.com/watch?v=3FrimYfyZNc
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS